
সত্তর, আশি, নব্বইয়ের দশকে সিনেমার দর্শকরা জাম্মুকে এক নামেই চিনে ফেলবেন। কিন্তু এই প্রজন্মের দর্শকদের কাছে খুব একটা পরিচিত নন তিনি। সে সময়কার সিনেমায় ভয়ংকর এক রূপ ছিল তার। তিনি জাম্বু, দর্শকরা তাকে এ নামেই চেনেন। সিনেমায় তিনি ছিলেন নির্মম, নিষ্ঠুর।
এই জাম্বু ২০০৪ সালের ৩ মে মারা যান। আজ তার মৃত্যুবার্ষিকী। সিনেমায় দাপুটে খল অভিনেতা হলেও আজকের সিনেমা সংশ্লিষ্টরা তাকে মনে রাখেননি। তাই তার মৃত্যুর দিনে নেই কোনো আনুষ্ঠান।
সিনেমায় জাম্বু নামে পরিচিতি পাওয়া এই খল অভিনেতার আসল নাম বাবুলাল। সিনেমায় কিভাবে তার নাম জাম্বু হলো? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নামটি দিয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। বাবুলালকে পর্দায় নিয়ে আসেন তিনিই।
জনপ্রিয় এই খল অভিনেতার মৃত্যুর দিনে আলাপ হয় পরিচালক ঝন্টুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সেটা ১৯৭২ সালের ঘটনা। আমি তখন পপুলার স্টুডিওতে লিডার সিনেমার শুটিং করছিলাম। পপুলার স্টুডিওটা নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার আগে। সেটা বাংলাদেশের প্রথম পরিচালক আব্দুল জব্বার খানের স্টুডিও ছিল। শুটিং চলাকালীন দেখি একটা ছেলে আসছে লম্বা-চওড়া। জিজ্ঞেস করলাম নাম কী? বলল, বাবুলাল। বললাম, অভিনয় করবে? সে বলল, হ্যাঁ করব। আমি তখন বললাম শর্ত রয়েছে…।’
এই পর্যায়ে ঝন্টু থামলেন। ফের ১৯৭২ সালে ফিরে গেলেন। বললেন, ‘আসলে মারপিটের একটা দৃশ্য আছে। বিপরীত দলে বাবুলালের মতো একটা ছেলে থাকলে ভালো হয়। আমি ওকে শর্ত দিলাম, মাথা ন্যাড়া করে অভিনয় করতে হবে। সে বলল, তা-ই করবো। এরপর মাথা ন্যাড়া করে দিলাম। সত্যি তাঁকে এবার দেখতে বড়সড় একজন মাস্তানের মতোই লাগছিল। আমি ওর নাম দিলাম জাম্বু।’
জাম্বু নামটি কেন দেওয়া হলো- এ প্রশ্ন করতেই ঝন্টু নিমেষেই উত্তর দিতে প্রস্তুত। তিনি বললেন, ‘বড় বিমানকে বলা হয় জাম্বো জেট। আর বাবুলাল দেখতেও বেশ বড়সড় ছিল। নামটা সে ভালোভাবেই গ্রহণ করল। এই নামটাই ফিল্মে ছড়িয়ে পড়ল।’
বিভিন্ন সূত্র বলছে, বাবুলাল বা জাম্বুর আদিনিবাস দিনাজপুরের পার্বতীপুরের সুইপার কলোনি। সেখানে ১৯৪৪ সালে তার জন্ম। ওই শহরে বাবুলালের পূর্বপুরুষ এসেছিলেন ভারত থেকে।
বাবুলাল পার্বতীপুর থেকে ঢাকায় আসেন। দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর মতে, বাবুলাল পিলখানায় কাজ করতেন। ঝন্টু বলেন, ‘বাবুলালের কাজের বিষয়টা আমি বলতে চাই না। কারণ সে সমাজের সবচেয়ে বড় কাজটা করত। কিন্তু সেই কাজটাকে আমরা ছোট কাজ হিসেবে দেখি।’
সাদাকালো সময় থেকে শুরু করে রঙিন পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। ‘আত্মরক্ষা’ সিনেমায় তিনি হাজির হয়েছিলেন পজিটিভ চরিত্রে।
জাম্বুর উল্লেখযোগ্য সিনেমা:
‘সাগর ভাসা’, ‘এক মুঠো ভাত’, ‘রক্তের দাগ’, ‘শীষনাগ’, ‘সেলিম জাভেদ’, ‘হাসান তারেক’, ‘নির্দোষ’, ‘মোহাম্মদ আলী’, ‘ধর্ম আমার মা’, ‘ডাকাত’, ‘নবাব’, ‘রাস্তা’, ‘রাস্তার রাজা’, ‘রকি’, ‘আত্মরক্ষা’, ‘পরিবার’, ‘সন্ত্রাস’, ‘অতিক্রম’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’, ‘উত্থান পতন’, ‘নয়নমণি’, ‘হাবিলদার’, ‘বিজয়’, ‘ঝুমুর’, ‘গোলাবারুদ’, ‘বাঘা বাঘিনী’, ‘সমর’, ‘অপরাজিত নায়ক’, ‘আপোষ’, ‘বিজলী তুফান’, ‘মাটির ফুল’, ‘পালকি’, ‘রুবেল আমার নাম’, ‘আঁচল বন্দী’, ‘টাইগার’, ‘বনের রাজা টারজান’, ‘হিরো’, ‘রাজাবাবু’, ‘নয়া লায়লা নয়া মজনু’, ‘শিকার’, ‘শত্রু ধ্বংস’, ‘আত্মত্যাগ’, ‘ঘাতক’, ‘কালিয়া’, ‘বন্ধু’, ‘সাজা’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘রাখাল রাজা’, ‘নয়নের আলো’, ‘বজ্রপাত’, ‘খুনের বদলা’, ‘অঙ্গার’, ‘বিপ্লব’, ‘যোদ্ধা’, ‘অভিযান’, ‘উসিলা’, ‘নিষ্পাপ’, ‘অমর’, ‘মৃত্যুদণ্ড’, ‘জ্যোতি’, ‘সাথী’, ‘মূর্খ মানব’, ‘দেনমোহর’, ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘চাকর’, ‘ববি’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘দায়ী কে’, ‘মিস লংকা’, ‘সাগরিকা’, ‘নির্মম’ ইত্যাদি।